সুরমা টাইমস ডেস্ক:: শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সিলেট-এর আয়োজনে ও জেলা প্রশাসন, সিলেট-এর সহযোগিতায় শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাটক বিভাগের প্রশিক্ষণার্থীদের অংশগ্রহণে বার্ষিক নাট্য প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে ‘বাঘের শিন্নি’ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় সিলেট নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে মঞ্চস্থ নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন নাট্য প্রশিক্ষক ভবতোষ রায় বর্মণ।
একটি বিলুপ্ত প্রায় লোক সংস্কৃতির নাম বাঘের শিন্নির গান। বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং ভারতের আসাম অঞ্চলে এক সময় বাঘের শিন্নির গানের বেশ প্রচলন ছিল। বিশেষত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়ের গড় এলাকার শাহ আরেফিনের মাজারকে কেন্দ্রে করে এ সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। গ্রামের জমিদার বা গৃহস্থ তাদের ঘরে ঘরে রাখাল রাখতো। রাখলরা গরু চড়ানোর পাশাপাশি ধান কাটাসহ যাবতীয় গৃহস্থের কাজ করে দিত। মাঘ-ফাল্গুন মাসে শীতের সময় আশে পাশের জঙ্গল থেকে বাঘ প্রজাতির পশুরা গ্রামে হানা দিত। সেই বাঘের হাত থেকে রক্ষা করতে রাখালরা রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিত। বড় শিন্নি আয়োজনের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতো। তখন হতো বাঘের শিন্নির গান। বিলুপ্ত প্রায় গ্রাম্য এই সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে নির্মাণ করা হয়েছে এই নাটকটি।
নাটকটি প্রদর্শনীর পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্তের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী এবং এই নাটকের নাট্যকার ও নির্দেশক ভবতোষ রায় বর্মণ।
বাংলার লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর গ্রামীণ জনপদের লোকাচারের বিষয়টিকে অনুষঙ্গ করে সুর-বাদ্য-হাস্যরসে ভরপুর বাঘের শিন্নি নাটকটি দেখতে আসা হলভর্তি দর্শকদের মুগ্ধ করে। মুহুমুর্হু করতালিতে আগত দর্শকরা অভিনন্দন জানান কলাকুশলীদের।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণকারী কলাকুশলীদের মধ্যে রয়েছেন খলিলুর রহমান ফয়সাল, আলী রেজা হাসিব, মো. বোরহান উদ্দীন, আদনান সামি নাহিয়ান, আবুল হাসনাত, শামসুল হুদা, সালেহ্ আহমেদ, আমিনা আক্তার, সৈয়দা শাহরিনা রহমান, জেসিকা নওরীন বৃষ্টি, ফাহমিদা বেগম হিমালয়া, জিল্লুর রহমান, তাপস চন্দ্র নাথ, মো. সিরাজুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দাস অন্তর, তৈয়বুর রহমান, সুরঞ্জন দাশ, মেহেদী ফারুকী, বিশ্বজিৎ কুমার দেব, অসীম সরকার ও শিমুল হাসান। প্রযোজনাটির নির্দেশনা সহযোগী ছিলেন বাবুল আহমেদ, আলোক নিয়ন্ত্রণে মো. শাহজাহান মিয়া ও রূপ সজ্জায় সালেহ নাহিদ।