নিজস্ব প্রতিবেদক::
সিলেটে একের পর এক ঘটছে ধর্ষণের নিষ্ঠুর। বেরিয়ে আসছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ পচনের ভয়ঙ্কর রূপ। ঘটনা শুনে আঁতকে উঠছে মানুষ। ছড়িয়ে পড়ছে ভীতি, আতঙ্ক আর নানামাত্রিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কে কখন শিকার হয়ে যায় এসব নিষ্ঠুরতার সেই ভয় কুরে কুরে খাচ্ছে অনেককে। কে জানে কখন কার পাশের চেনা মানুষটা হয়ে উঠে হিংস্র দানব আর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে তারই ওপর। যেখানে ডাক্তারের কাছে নিরাপদ নয় রোগীর স্বজন, মসজিদের ইমামের কাছে নিরাপদ নয় ৯ বছরের নিরপরাধ শিশু। সেখানে কে কার থেকে নিরাপদ এ সমাজে? মানবিকতার পতন কোন স্তরে নামলে এসব ঘটনা ঘটতে পারে। একবার নয়, দুইবার নয়, বারবার দেখছে মানুষ সমাজ পচনের এ ভয়ঙ্কর রূপ। প্রতিবার ঘটে যাওয়া একেকটি বীভৎস ঘটনা ম্লান করে দিচ্ছে আগের বীভৎসতার সব রেকর্ড। গেল কদিন হল সিলেটে ঘটেছে ধর্ষণের দুটি বীভৎস ঘটনা। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজন ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে ইন্টার্ন ডাক্তার ও জকিগঞ্জে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীকে মসজিদের ইমাম ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় ইমাম ও চিকিসককে আটক করেছে পুলিশ।
ওসমানী মেডিকেল ::– সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজন এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক। এই অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। ধর্ষিতা কিশোরী নবম শ্রেণিতে লেখা পড়া করছেন। তিনি তার তার অসুস্থ নানির সঙ্গে রাতে হাসপাতালে ছিলেন। গত রোববার মধ্যরাতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠে। গত সোমবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসককে পুলিশ আটক করে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম মাকামে মাহমুদ। সে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার মোখলেসুর রহমানের পুত্র। সে ওসমানী মেডিক্যালের নাক, কান ও গলা বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক। স্কুলছাত্রীটি তার পরিবারের সঙ্গে সিলেট মহানগরীতেই থাকেন।
জানা যায়, অসুস্থ নানির সঙ্গে হাসপাতালে ছিল ওই শিক্ষার্থী। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন ওই স্কুলছাত্রীর নানি।
গত রোববার রাতে ওই স্কুলছাত্রী ছাড়া আর কেউ রোগীর সঙ্গে ছিল না। রাতে ফাইল দেখার কথা বলে ডাক্তার মাহী ওই মেয়েটিকে একই ফ্লোরে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। সকালে বাবা-মা হাসপাতালে আসার পর স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা তাদের জানায়।
জকিগঞ্জে মসজিদের ইমাম ::– জকিগঞ্জের হাজারীচক গ্রামের ৪র্থ শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে পাশবিক নির্যাতন (ধর্ষণ) করার অভিযোকে আটক হাজারীচক পশ্চিম মহল্লা নতুন মসজিদের ইমাম হাসান আহমদ ওরফে আলী হোসেনকে গত সোমবার জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। সে জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, রোববার বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পর স্কুল ছাত্রীকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে মসজিদের বারান্দায় হুজরাতে নিয়ে যায় মসজিদের ইমাম। এক পর্যায়ে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ধর্ষন করে অচেতন অবস্থায় মেয়েটিকে হাত, পা, মুখ বেঁধে খাটের নীচে লুকিয়ে রাখে। স্কুল ছাত্রী বাড়ীতে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাতে মসজিদের বারান্দায় হুজরা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় উত্তেজিত হাসান আহমদ ওরফে আলী হোসেনকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশ সোপর্দ করে। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুর পিতা বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
রায়নগরে মেয়েকে ধর্ষণ ::– নগরীর রায়নগরে ১০ বছর বয়সী শিশুকে ২ মাস ধরে ধর্ষণের দায়ে শিশুটির সৎ বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিকটিম শিশুটি সিলেট নগরীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। গত শনিবার রাতে নগরীর রায়নগর দর্জিপাড়া এলাকা থেকে শিশুটির সৎ বাবাকে আটক করা হয়।
জানা যায়, শিশুটির মা সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে কর্মরত আছেন। শিশুটির মা প্রথমে বরিশালের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। সেই স্বামীর ঘরেই জন্ম নেয় শিশুটি। শিশুটির জন্মের পর ছাড়াছাড়ি হয় এই দম্পতির। পরবর্তীতে শিশুটির মা পুনরায় বগুড়া জেলার গাবতলি থানার সরধনকুঠি গ্রামের অলি মন্ডলের ছেলে পিটু মিয়া (২৮)কে বিয়ে করেন।
২০১৭ সালে এই সৎ বাবার কাছে রেখে সৌদি আরবে যান তার মা। সেসময় মেয়েকে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তি করিয়ে দিন তিনি। এরপর থেকে সিলেট নগরীর দর্জিপাড়া এলাকায় এই শিশু কন্যাকে নিয়েই বসবাস করে সৎ বাবা পিটু মিয়া। কিন্তু বিগত দুই মাস পূর্ব থেকে ঐ শিশুকে জোর পূর্বক প্রতিদিন রাত্রে ধর্ষণ করে পাষণ্ড সৎ বাবা। মেয়েটি এসকল ঘটনা কাউকে বলতে চাইলে তাকে প্রতিনিয়তই মারপিট করতো তার সৎ বাবা। শুক্রবার রাতেও মেয়েটিকে কয়েকবার ধর্ষণ করে পিটু। সকালে শিশুটিকে মারপিট করে গোসল করায় তার পাষণ্ড পিতা। সেই সাথে ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য হত্যার হুমকিও দেয়। মারপিটের ভয়ে শিশুটি তার এক বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নিয়ে বান্ধবীর মাকে সব কিছু খুলে বলে। পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের সাহায্যে শিশুটির বান্ধবীর মা সিলেট কোতোয়ালি থানায় শিশুটিকে নিয়ে যান। শিশুটির বক্তব্য শুনে সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশ তার সৎ বাবাকে আটকের ব্যবস্থা করেন। শনিবার রাতে এই সৎ বাবাকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় শিশুটির মা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান, তার মেয়ে তাকে পূর্বে কয়েকবার বলেছিল। তিনি মধ্যখানে একবার দেশে এসে তার স্বামীকে স্থানীয় জামাল কামাল মাজারের সামনে নিয়ে শপথ করান। এতে তিনি তার স্বামী পিটুকে বলেন সৎ মেয়ে হলেও সে তোমার মেয়ে। একে মেয়ের চোখে দেখো। তিনি তার মেয়ের ধর্ষণের কথা শুনে অবাক হয়ে বলেন, যদি তার স্বামী সত্যি এমন কাজ করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হওয়া দরকার।