সুরমা টাইমস ডেস্ক:: বাঁ থেকে অহিদ আহমদ, আনোয়ারা আলী ও রাবিনা খানলন্ডনের বাঙালিপাড়া খ্যাত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচনে হেরেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন প্রার্থীর সবাই। তাদের হার নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লেবার পার্টির টিকিটে বর্তমান মেয়র জন বিগস পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৮৬৫ ভোট। এবারও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পিপলস অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাবিনা খান। তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার ১১৩ ভোট। সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান সমর্থিত অহিদ আহমদ পেয়েছেন ১১ হাজার ১০৯ ভোট। আর কনজারভেটিভ পার্টির আনোয়ারা আলী পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ১৪৯ ভোট।
গত নির্বাচনে রাবিনা খান পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ৩৮৪ ভোট। এ হিসেবে গত নির্বাচনের চেয়ে জন বিগসের সঙ্গে তার ব্যবধান বেড়েছে এবার ২৭ হাজার ৯৮৭ ভোটের।
টাওয়ার হ্যামলেটসের এমপি রোশনারা আলী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এ বারায় স্বতন্ত্র ও নিজের দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে দুবার জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফুর রহমান। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি এ বারায় বসবাস করেন। মূলধারার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ। তারপরও এবারের নির্বাচনে তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী তিনটি দলের প্রার্থী হিসেবে লড়েও কেন বড় ব্যবধানে হারলেন তা বিশ্লেষণ করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটের গণভোট পরবর্তী বাস্তবতায় নানামুখী কারণে দেশজুড়ে লেবার পার্টির ভোট বেড়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটস বরাবরই লেবার পার্টির শক্ত ঘাঁটি ও দলের ‘সেফ সিট’ হিসেবে পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের দিন আবহাওয়া ভালো থাকায় ভোটদানের হারও বাড়ে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পায় শ্রমজীবী মানুষের দল হিসেবে পরিচিত লেবার পার্টি।
এ বারায় সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের একটি শক্তিশালী ভোট ব্যাংক ছিল। তবে তার সমর্থিত প্রার্থী এবারের নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে সরে গেছেন। গত নির্বাচনে সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের সমর্থন রাবিনা খানের প্রতি থাকলেও এবার আর তাকে সমর্থন দেননি লুৎফুর।
বরং তিনি তার সময়ের ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদকে সমর্থন দিয়ে রাবিনাকে দৃশ্যত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাবিনা ও অহিদ দুজনেই মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে নামেন। এতে লুৎফুর রহমান বলয়ের ভোট দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। অবশ্য লেবার পার্টির একদল ক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র বলয়ের নেতাকর্মীও গোপনে রাবিনাকে সমর্থন দেন।
এক বলয়ের অহিদ-রাবিনা দুজনেই প্রার্থী থাকায় ক্ষুব্ধ হন লুৎফুর রহমানের সমর্থকরা। দুই প্রার্থীকে এক করতে না পারায় ভোটের দিনও অনেক ভোটারকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভের প্রার্থী হিসেবে ডা. আনোয়ারা আলীকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যদিও তিনি মেয়রের চেয়ে সংসদ নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। লেবারের শক্ত ঘাঁটিতে সব প্রার্থীর মধ্যে সবার শেষে প্রচারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তার টার্গেট ছিল মূলত পার্টির নিজস্ব ভোটব্যাংকের শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলাভাষী পত্রিকার সম্পাদক অলিউর রহমান খান বলেন, ‘এ নির্বাচনের ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিউনিটিতে আত্মঘাতী মনোভাব পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সূত্র :– বাংলা ট্রিবিউন