সুরমা টাইমস ডেস্ক ঃঃ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। তিনি সৌদি আরবের নারীদের ক্ষমতায়নের ব্যাপারে যুগান্তকরী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি থেকে শুরু করে সিনেমাহলে যাওয়া, স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা এবং দোকানে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমের সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে লবণ উৎপাদন এবং নারীদের জন্য আলাদা বাজার চালুর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এসে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান একটি ব্যক্তিগত সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলেছেন। ‘আল সাইফ আল-আজরাব’ নামে একটি নিজস্ব এলিট বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘ব্ল্যাকওয়াটার’ বাহিনীর সহায়তায় গড়ে তোলা হয়েছে। এ বাহিনীর সব কার্যক্রম তদারকি করেন যুবরাজ সালমান নিজেই এবং তার কাছেই এ বাহিনী কার্যক্রমের রিপোর্ট পেশ করে থাকে। বিশেষ এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজার।
বিশেষ এই বাহিনীর নামকরণ করা হয়েছে দ্বিতীয় সৌদি রাজপ্রতিষ্ঠাতা ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আল সউদের তলোয়ারের নামানুসারে। আরবি ‘আল সাইফ আল-আজরাব’ অর্থ হল ‘এমন তরবারি যেটি রক্তের দাগে মরিচা ধরেছে’।
কথিত আছে ইমাম তুর্কি একবার তার তলোয়ারের ওপর মরিচা জমতে দেখে সেটিকে আল-আজরাব নাম দেন। সৌদি আরবের জাতীয় পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবার নিচে যে তলোয়ারের ছবি রয়েছে সেটিও এই তলোয়ার। তলোয়ারটি ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাহরাইনে সংরক্ষিত ছিল।
যুবরাজ সালমান রাজপরিবারের ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করতে এই এলিট বাহিনীকে ব্যবহার করছেন বলেও জানা গেছে। আর গেলো নভেম্বরে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে প্রিন্স শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের সময় ওই বাহিনীকে ব্যবহার করেন যুবরাজ সালমান।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বাদশাহ সালমান দায়িত্ব নেয়ার পর একটি এলিট ফোর্স হিসেবে আল আজরাব সোর্ড ব্রিগেড গঠন করা হয়। সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদার পাঁচ হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছে এই বাহিনী। সেনা, নৌ, বিমান ও রাজকীয় বাহিনীর সদস্যদের মধ্য থেকে নেয়া হয়েছে তাদের। এই বিশেষ বাহিনীর তদারকি করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
প্যারাস্যুট, দাঙ্গা দমন, স্নাইপার, বিস্ফোরক, স্কুবা ডাইভিংসহ উচ্চপর্যায়ের সব ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বাহিনীর সদস্যদের। এই বাহিনীর দায়িত্ব কী বা কী উদ্দেশ্যে এটি গঠন করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, স্পর্শকাতর ও সরাসরি রাজকার্য সম্পৃক্ত কাজ করে এরা।
ইতালির রেনেসাঁ যুগের শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি শিল্পকর্ম সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান কিনে নিয়েছিলেন। ‘সালভাতর মুন্ডি’ নামের চিত্রকর্মটি যিশুখ্রিস্টের পোর্ট্রেট (প্রতিকৃতি)। গত ১৫ নভেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত একটি নিলামে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলার দামে চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়।
৫০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ইয়ট এবং ভিঞ্চির আঁকা ৪৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চিত্রশিল্প ক্রয় নিয়ে সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে বিতর্ক রয়েছে। তারপরও বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি কিনেছেন তিনি। দুই বছর আগে ফ্রান্সের ‘শ্যাটো লুইস ফোরটিন’ নামের বাড়িটি ৩০ কোটি ডলারে (প্রায় ২৪০০ কোটি টাকায়) বিক্রি হয়েছিল। ৫৭ একরের ল্যান্ডস্কেপে রয়েছে স্বর্ণপাতার ঝরনা, মার্বেলের ভাস্কর্য এবং আঁকাবাঁকা গাছের বেড়ার দেয়াল, যা গোলক ধাঁধার সৃষ্টি করে।
সিআইএর সাবেক পরিচালক এবং লেখক ব্রুস ও লেইডেল মনে করছেন, ‘সৌদি যুবরাজ নিজের ভাবমূর্তি গড়েতে নিজেকে ভিন্ন ধারার বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তিনি দেখাতে চাচ্ছেন তিনি আলাদা চরিত্রের, তিনি একজন সংস্কারক, অন্তত সমাজ সংস্কারক এবং তিনি দুর্নীতিবাজ নন। তবে এসব বিলাসী কেনাকাটা তার ভাবমূর্তির ওপর একটি ভয়াবহ আঘাত।’-সৌদি গেজেট, সিএনবিসি নিউজ, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও নিউইয়র্ক টাইমস